শহরের ছাদবাগান থেকে গ্রামবাংলার উঠোন—সব জায়গাতেই জবা গাছ তার সৌন্দর্য ও ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য জনপ্রিয়। পূজা-পার্বণ, সাজসজ্জা বা শুধু বাগানের শোভা বাড়াতেই হোক, জবা গাছের চাহিদা সারা বছরই থাকে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, গাছে পাতা প্রচুর হলেও ফুলের সংখ্যা কম। উদ্যান বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কিছু সহজ পরিচর্যা ও সঠিক যত্নে জবা গাছে ফুলের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
১. সঠিক আলো
জবা গাছে প্রচুর আলো দরকার। প্রতিদিন অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা সরাসরি রোদে রাখতে হবে। টবে লাগানো হলে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সকালের রোদ পড়ে, কারণ সকালের আলো গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
২. সঠিক মাটি
জবা গাছ ঢিলা ও উর্বর মাটি পছন্দ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫০% বাগানের মাটি, ২৫% গোবর সার বা কম্পোস্ট ও ২৫% নদীর বালি মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে গাছ সুস্থ থাকে এবং ফুল বেশি ফোটে। মাটি যেন জলনিষ্কাশনের উপযোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সার প্রয়োগ
ফুল বাড়ানোর জন্য জবা গাছে পটাশ ও ফসফরাস সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করা জরুরি। মাসে একবার তরল জৈব সার (গোবরের গুল বা সরিষার খোলের জল) দেওয়া ভালো। ফুলের সময় অতিরিক্ত নাইট্রোজেনযুক্ত সার ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে পাতা বাড়লেও ফুল কম হয়।
৪. নিয়মিত ছাঁটাই
শীত শেষে ও বর্ষার আগে গাছ ছাঁটাই করলে নতুন ডালপালা জন্মায়, যা পরে বেশি ফুল দেয়। শুকনো ও রোগাক্রান্ত ডাল সঙ্গে সঙ্গে কেটে ফেলতে হবে। ফুল শুকিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে দিলে নতুন কুঁড়ি দ্রুত আসে।
৫. জল দেওয়ার নিয়ম
জবা গাছে অতিরিক্ত জল দিলে শিকড় পচে যেতে পারে। গরমকালে প্রতিদিন সকাল বা বিকেলে জল দিন, শীতে ২-৩ দিনে একবার জল দেওয়াই যথেষ্ট। টবে লাগানো হলে মাটির উপরের স্তর শুকিয়ে গেলে জল দিন।
৬. রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ
লাল মাকড়, এফিড বা মিলিবাগ প্রায়ই জবা গাছে আক্রমণ করে। নিমতেল মিশ্রিত জল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে নিয়মিত গাছ পরিষ্কার রাখতে হবে।
৭. মৌসুমভিত্তিক যত্ন
বর্ষায় গাছের চারপাশে জল জমতে দেবেন না। শীতে গাছকে ঠান্ডা বাতাস থেকে আড়াল করে রাখুন। গ্রীষ্মে হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখলেও সকালে পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া জরুরি।
উদ্ভিদবিদদের মতে, এই নিয়মগুলি মেনে চললে কয়েক মাসের মধ্যেই জবা গাছে ফুলের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সঠিক যত্ন পেলে জবা শুধু আপনার বাগান নয়, আপনার মনও রঙিন করে তুলবে।
No comments:
Post a Comment